জানুন, আমেরিকায় পড়ার সুযোগ কেন আপনার ক্যারিয়ার ও জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। উচ্চশিক্ষার সুবিধা ও নতুন অভিজ্ঞতার কথা!
বিদেশে তো পড়ার অনেক দেশ আছে, কিন্তু অ্যামেরিকা কেন সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত?
ওয়েল, উত্তর দেবার আগে সহজ সূত্রের মতো একটা কথা বলে রাখি — মনে রাখবেন, “যে দেশে ঢোকা যত সহজ, সেখানে টেকা তত কঠিন”। কাজেই, শর্টকাটের সন্ধানে বিশ্বের অনেক দেশই আপনাকে “উচ্চশিক্ষা বা স্কলারশিপ” এর টোপ দেখাতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী হিসাবে ইনভেস্টমেন্টের রিটার্ন তুলে আনার অঙ্কে ইউএসএ সেসব দেশের তুলনায় বহুগুণ এগিয়ে।
আবারো বলছি, অ্যামেরিকায় আসা কঠিন মানেই যে আপনি ইউএসএকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেবেন, ব্যাপারটা যেন তা না হয়। আর ইউএসএতে আসা কঠিন নাকি সহজ তা নির্ভর করছে আপনি আপনার প্রোফাইলের বিপরীতে কোন ধরণের প্রোগ্রাম নির্বাচন করে কিভাবে আবেদন করছেন তার উপরে। অনেকের জন্য এটা একেবারেই সহজ, আবার অনেকের জন্য প্রায় অসম্ভব। আপনার উচিত হবে শুরুতেই পজিটিভ অ্যাটিচুড নিয়ে যাত্রা শুরু করা। প্রধান কয়েকটা কারণ তুলে ধরছি, কেন ইউএসএ পুরো পৃথিবীর স্টুডেন্টদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য।
(১) বিনিয়োগকৃত টাকার বিপরীতে প্রাপ্ত ডিগ্রির “ভ্যালু”
ধরা যাক আপনি 0% স্কলারশিপ পেলেন, মানে পুরো টাকাটাই পকেট থেকে দিয়ে পড়লেন। তার পরেও যে মানের ডিগ্রি আপনি পাবেন এবং প্রাপ্ত ডিগ্রি দিয়ে বিশাল জব মার্কেটে যতটা স্বাচ্ছন্দে নিজেকে সেট করে নিতে পারবেন, তা পৃথিবীর অনেক দেশেই সম্ভব না। সারা দুনিয়ার কোম্পানিগুলো চেষ্টা করে আমেরিকায় যেন তাদের একটা অফিস থাকে। বিদেশী প্রতিষ্ঠান একটু ব্যবসায় ভালো করতে পারলেই নিউইয়র্ক, এলএ বা মায়ামিতে একটা অফিস খুলে ফেলে নিজেদের ইমেজ বাড়ানোর জন্য। যার ফলে প্রতিদিনই একেকটা নতুন প্রতিষ্ঠান আমেরিকার মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, নতুন জবের ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে। ভালো একটা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়া শেষে ঠিক মতো নেটওয়ার্কিং করতে পারলে সহজেই জব মার্কেটে নিজেকে সেট করে নিতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে, এই “সহজে” মানে কিন্তু আরাম আয়েসে হাত গুটিয়ে বসে থাকা নয়। আগেই বলেছি, শর্টকাটে কিছু কোনোখানেই হয় না।
(২) যে কোন সাবজেক্ট যে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে
অ্যামেরিকায় ব্যালেন্সড ডাইভার্সিটি প্রমোট করে। মানে এখানে আপনি বায়োলজি থেকে ব্যাচেলর শেষ করে কম্পিউটার সায়েন্সের কোন প্রফেসরের বায়োলজিকাল ফিল্ডের একটা রিসার্চে যুক্ত হতে পারেন । খুব স্পেসিফিক কয়েকটা সাবেজক্ট বাদে মোটামুটি সবখানেই ডাইভার্সিটিকে স্বাগত জানানো হয়। আপনি মিউজিকে পড়ে এসেছেন, এবার ফার্মেসি পড়তে চান? ব্যাস, কোন অসুবিধা নেই। কোন একটা কমিউনিটি কলেজে গিয়ে অ্যানাটমি ফিজিওলজি কোর্স করে নিন, অনলাইনে ক্যালকুলাস কোর্স করে নিন, ব্যাস, আপনি অধিকাংশ ফার্মেসি স্কুলের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। বয়েস, স্টাডি গ্যাপ বা ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডে আন্ডারগ্র্যাড করে আসা এগুলো আমেরিকার জন্য কোন বিষয়ই না।
(৩) আকাশচুম্বী রিসার্চ ফান্ড
NSF, NIH, DOD, DOE ছাড়াও স্টেটের নিজস্ব অসংখ্য ছোট খাটো ফান্ডিং সোর্স থাকে। তেলা মাথায় তেল দেবার মতো যে প্রফেসররা গ্র্যান্ট পান, যাদের টিম বড় এবং পাবলিকেশন বেশি, তারা গ্র্যান্টও পান বেশি। মোট আর এন্ড ডি বাজেটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চায়নার (378 বিলিয়ন) থেকে আমেরিকা অনেক এগিয়ে (584 বিলিয়ন)। এবং সব চেয়ে বড় কথা হলো, রিসার্চের পেছনে আমেরিকার বিনিয়োগের সংষ্কৃতি চায়নার মতো দশ পনের বছর আগে শুরু হয়নি। এটা তারা করে আসছে মোটামুটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। চায়না রিসেন্টলি উঠে এসেছে (তিরিশ বছর আগে, 1991 সালে এদের ছিল 13 বিলিয়ন, যখন আমেরিকার ছিল 257 বিলিয়ন)। 2009 সাল থেকে চায়না টানা দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তাই অনেকেই ভুল করে ভেবে বসেন যে চায়না বোধ হয় আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেছে, ব্যাপারটা আসলে সেরকম না। আপনি যদি রিসার্চে বুঁদ হয়ে থাকতে চান, তাহলে মনে রাখবেন অ্যামেরিকার ফেডারেল থেকে শুরু করে স্টেট এমনকি কাউন্টি লেভেলের পুঁচকে ইউনিয়ন পর্যন্ত আপনাকে টাকা গ্র্যান্ট করার জন্য বসে আছে — শুধু পাবার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
(৪) ক্যাম্পাস, ফ্র্যাটার্নিটি এবং নেটওয়ার্ক
এই ব্যাপারটা গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টরা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেন না। ইউ এস ইউনিভার্সিটির প্রত্যেকটা আন্ডারগ্র্যাড স্টুডেন্ট তার নিজের ক্যাম্পাস ম্যাস্কট থেকে শুরু করে অ্যাথলেটিক টিম, মোটো এবং ছোট ছোট অর্গ্যানাইজেশনের সুসম্পর্ক অনেক গভীর পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারেন। ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করার সময় আমি ফাই ডেল্টা কাই নামে একটা প্রফেশনাল ব্রাদারহুডের মেন্টর ছিলাম, তাদের নিয়ম কানুন এবং অন্যান্য ‘ব্রাদার’দের সাথে পেশাদারী সম্পর্ক বিষয়ে তাই কিছুটা জানি। এছাড়া অসংখ্য প্রফেশনাল কনফারেন্স এবং অন-ক্যাম্পাস ক্যারিয়ার ফেয়ারে অ্যালামনাইদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে জবে সহজে প্লেসমেন্ট এক বিশাল সুবিধা। আমেরিকা দেশটা এমনিতেই অনেক বড়, জায়গার অভাব নেই। তাই ক্যাম্পাসগুলোও অনেক ব্যাপক জায়গা নিয়ে নির্মাণ হয় (আর্বান ক্যাম্পাসগুলো ছাড়া)। একটা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারা তাই জীবন বদলে দেওয়ার সুযোগের অপর নাম।
(৫) কালচারাল ডাইভার্সিটি এবং ইনক্লুশন
ইনক্লুশন মানে হলো আপনি যত “উদ্ভট”-ই হোন না কেন, আপনাকে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আপন করে নেবে। আপনি ট্রান্সজেন্ডার? সারা জীবন ভয়ে কুঁকড়ে কেটেছে? আমেরিকায় যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি নিজের পছন্দের পরিচয়ে বাঁচতে পারবেন (ভয়ের বিপরীত হলো PRIDE, এবং এলজিবিটিকিউপ্লাস এর প্রতীক হিসাবে প্রাইড পতাকা ব্যবহৃত হয়)। আপনি হিজাব করেন? রঙ অন্যরকম? আপনার এই ডাইভার্সিটিকে গ্রহণ ও বরণ করার জন্যই আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ ভাবে প্রস্তুত হয়ে আছে।
(৬) পড়া শেষে জব এবং ইমিগ্রেশন
হ্যা, আমেরিকায় যে কোন সাবজেক্টে পড়ালেখা করলেই ১ বছরের ওয়ার্ক পারমিট (ওপিটি) পাওয়া যায়। আর স্টেম হলে আরো দুই বছর বেশি। আগেই বলেছি, এমপ্লয়ারের সংখ্যা বেশি বলে চাকরি পাওয়া যায় পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে অনেক সহজেই। ভাষারও কোন অসুবিধা নেই — সবখানেই ইংলিশ (যদিনা আপনি হিস্পানিক পপুলেশনের সাথে কাজ করার চাকুরি নেন)। বৈধ উপায় স্টুডেন্ট থেকে গ্রিন কার্ড প্রাপ্তির অনেকগুলো উপায় আছে। মাস্টার্স, পিএইচডি বা প্রফেশনাল সাবজেক্টে (ফার্মেসি, ল বা নার্সিং ইত্যাদি) পড়ালেখা করলে ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ওয়েইভারের আওতাও গ্রিনকার্ডও পাওয়া যায়। আমেরিকার জব মার্কেটে টিকতে হলে আমেরিকা থেকে নেওয়া ডিগ্রির বিকল্প নেই। তাই ভালে প্রোগ্র্যামে ভর্তি হবার পরে আপনি নিজের অজান্তেই এমন একটা সিস্টেমের অংশ হয়ে যাবেন যেখানে জব বা গ্রিনকার্ড প্রাপ্তি এগুলো সব একটার পর একটা হতেই থাকবে। আপনি লিটারেলি চিন্তা করতে পারেন: স্কাই ইজ দ্যা লিমিট।
আর অবশ্যই মনে রাখবেন,
শিক্ষার থেকে বড় বিনিয়োগ আর হয় না।
আলসেমিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া সময়ের চেয়ে লোকসান আর হয় না