IELTS বা TOEFL নিয়ে অনেকেই সাজেশন চায়! ভালো স্কোর উঠছে না! কোন কোচিং-এ ক্লাস করলে ভালো হবে? আমি উত্তর দেই: কোচিং করে লাভ নেই। যে ছেলে বা মেয়েটা কোচিং-এ ক্লাস করে ৮ পেয়েছে, বিশ্বাস করুন সে কোচিং না-করলেও ৮ পেত। কোচিং-এ গেলে আপনি সমমনা কয়েকজনকে পাবেন। প্রাকটিস করতে পারবেন। যেটা অনলাইনের এই যুগে ফ্রিতেই করা যায়।
ইংরেজিতে ভালো করবেন, যখন আপনার স্কিল ভালো থাকবে। কোচিং এই ইংরেজি স্কিল আপনার মাথায় কখনো ঢোকাতে পারবে না। খেয়াল করে দেখবেন, যারা এগুলিতে ভালো করছে, তাদের স্কিল অনেক আগে থেকেই ভালো, স্কুল থেকে ভালো, ইংরেজি গল্প/সংবাদপত্র এগুলি অনেক ছোটবেলা থেকেই পড়ে। তাই সবার আগে উচিত এই স্কিলটা ডেভলপ করা। তারপর একটা বিশেষ পরিবেশে প্রাকটিস এবং শেখার জন্য কোচিং করতে চাইলে করতে পারেন অল্প সময়ের জন্য।
আমার মতে, সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রিডিং: ইংরেজি যত পড়বেন তত ইংরেজি স্কিল আপনার বাড়বে। রিডিং এর জন্য কোচিং সেন্টারগুলিতে যান। আপনাকে বিভিন্ন টেকনিক শিখাবে। কীভাবে কম্প্রিহেনশন থেকে খুঁজে খুঁজে (স্কিমিং, স্ক্যানিং) উত্তর বের করতে হবে! এতো কাহিনী করে আপনি ম্যাক্সিমাম ৬ পাবেন। কিংবা কিছু টেকনিক জানবেন। আপনার ইংরেজি জ্ঞান কিন্তু আগের মতোই থাকবে। আমরা যখন বাংলা কোনও কলাম কিংবা গল্প পড়ি, দুই পৃষ্ঠার একটা জিনিস ৫ মিনিটেই শেষ করে ফেলি। এর ভেতর থেকে যদি কোনো প্রশ্ন করা হয়, তাহলে আপনি এমনিতেই উত্তর দিতে পারবেন। তাহলে ইংরেজিতে কেন আমরা পারি না? কারণ আমরা ইংরেজি পড়ি না। এখন যদি আপনি প্রতিদিন আপনার পছন্দের বিষয় ২ঘন্টা করে পড়েন, ৬মাস পরে দেখবেন আপনার রিডিং এর অনেক উন্নতি হয়েছে। আপনি এক নিমিষেই একটা রিডিং কম্প্রিহেনশন শেষ করে ফেলছেন। আপনার কোনো টেকনিক অবলম্বন করা লাগছে না। ইংরেজি ডেইলি নিউজপেপার একটা ভালো উপায়। তবে ডিকশনারি নিয়ে বসা যাবে না। বাংলা মিনিং খুঁজে ইংরেজি মিনিং বের করার মতো ঝামেলার কাজ আর নেই। তার চাইতে কনটেক্সট দিয়ে মানে বুঝবেন। মানে না বুঝলে সম্যসা নাই, পড়তে থাকুন। পুরো স্টোরি শেষ করলে একটা অর্থ দাঁড় করাতে পারবেন। এভাবে রিডিং প্রাকটিস করলে আপনি বিরক্ত হবেন না। যেসব জিনিসে মজা পান সেগুলি পড়ুন। থ্রিলার ভালো লাগলে থ্রিলার!
রিডিং এর এই হ্যাবিট চালু থাকলে এটা থেকে আপনার রাইটিং এও হেল্প করবে। লিসেনিং আর স্পিকিং এর ক্ষেত্রেও একই সাজেশন: শুনতে থাকুন আর বলতে থাকুন। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াতে অনেক প্রবাসী কাজ করতে যায়। পড়ালেখা বেশিদূর করা নাই অনেকেরই। তারপরও কয়েক মাসের ভেতরেই FLUENTLY মালে ভাষায় কথা বলে! কারণ কী? এরা গ্রামার বুক নিয়ে বসে নাই। এরা ডিকশনারি খুলে মুখস্থও করছে না। জীবনের তাগিদে বলতে আর শুনতে গিয়েই তারা পারে।
এতো না পেঁচিয়ে IELTS-এ ভালো করার জন্য আমার ব্যক্তিগত অভিমত দেই(যারা ইংরেজিতে অনেক ভালো, তাদের জন্য নয়)-
১) এটলিস্ট ৬-১২ মাস প্রতিদিন ২ঘন্টা ধরে টানা ইংরেজি রিডিং(নিউজপেপার, নভেল) পড়তে হবে।
২) এটলিস্ট ৬-১২ মাস প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে মুভি, টিভি(বিবিসি) এগুলো শোনা, নিজে নিজে এবং অন্যদের সাথে কথা বলা প্রাকটিস করা।
৩) এটলিস্ট ৬-১২ মাস প্রতিদন ২০মিনিট করে কোনও একটা টপিক নিয়ে লেখা, তারপর নিজের লেখার সমালোচোনা করা।
৪) ৬-১২ মাস পরে এসে, অনলাইনে IELTS এর ম্যাটেরিয়ালস গুলো দেখা, প্রাকটিস করা(এই সময়ে এসে, আপনার ট্যাকা পয়সা বেশি থাকলে কোচিং করতে পারেন)।
ধরুন, আপনি ৩০ কেজির একটা বস্তা মাথায় তোলা শিখেছেন। এখন যদি ৫০ কেজি বস্তা উত্তোলনের জন্য কোচিং-এ যান, আপনারে শিখাবে- ক) বস্তার এই অংশে ধরবেন; খ) পা এইভাবে রেখে বস্তা উত্তোলনের চেষ্টা করবেন ইত্যাদি! আপনার কিছু টেকনিক জানা হবে। ৫০ কেজি আপনি তুলতে পারবেন না সহজে। আমি যেটা বলতে চেয়েছি সেটা হলো: ক) এক্সারসাইজ করুন; খ) ভালো খাবার-দাবার খান; গ) শক্তি বাড়ান! এতে আপনার সক্ষমতা বাড়বে, তারপর কিছু টেকনিক অবলম্বন করে ৫০ কেজির বস্তা ধুপধাপ তুলুন।
আবার ধরুন, আপনি মতিঝিল থেকে মিরপুর যেতে চান। কোচিং আপনাকে যেটা করবে, একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে সেখানে ধরে নিয়ে যাবে। কিন্তু যখন আপনার কাছে টাকা(গাড়ি) থাকবে না, আপনার সেখানে যেতে কষ্ট হবে, কারণ পথটা অচেনা! আমি বলছি, আপনি হেঁটে হেঁটে মিরপুর যান। হেঁটে হেঁটে গেলে, আপনি পুরো পথটা চিনবেন, আশপাশের সবকিছু জানবেন। হয়তো একটু কষ্ট হবে, কিন্তু ভবিষ্যতে, যেভাবে খুশি সেভাবে যেতে পারবেন, কারো সাহায্য ছাড়াই।
© Nazmul Islam Shiplu, Post Doctoral Research Associate at Imperial College London, United Kingdom.