নরওয়েতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কিছু কথা। নরওয়ে স্কান্ডেনেভিয়ান দেশসমূহের একটি। ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত শান্তিপূর্ণ এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি দেশ।
উচ্চশিক্ষা গ্রহণ নিজ দেশের সকলের জন্য তথা পুরো দুনিয়ার সবার জন্য উন্মুক্ত, আছে সম্পূর্ণ বিনা-পয়সায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। যেকোনও দেশের নাগরিক নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়া মেইনটেইন করতে পারলে পাবে বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগে। পড়াশোনা শেষ করে আছে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সম্ভাবনা। আইইএলটিএস লাগবে, সাথে অফার লেটার পেলে ১৩ লাখ +- টাকা একবছরে লিভিং এক্সপেন্সেস এর টাকা নরওয়েতে সেন্ড করে দিতে হবে যা আপনি ভিসা পেয়ে নরওয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আপনার নরওয়েজিয়ান ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-এ ট্রান্সফার করে দিবে ইউনিভার্সিটি। বাকি প্রসিডিওর নিচে আলোচনা করা হয়েছে। এক নজরে দেখে নিন।
★অফার লেটার হাতে আছে, এখন আর কী কী করা বাকি নরওয়ে আসার জন্য?
কাগজপত্রে ধাপ্পাবাজি না-থাকলে নরওয়ের ভিসা পাওয়া একদমই কঠিন কিছু না। যাইহোক, এক এক করে বলি কী কী করবেন অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর:
১. প্রথম কাজ টাকা পাঠানো। যেহেতু আপনি সেল্ফ ফাইন্যান্স স্টুডেন্ট, সেহেতু আপনাকে থাকা খাওয়ার খরচ বাবদ ১১১৬৫৭ ক্রোনা এর সমপরিমাণ টাকা ইউনিভার্সিটি এর অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিতে হবে। টাকা পাঠানোর জন্য মতিঝিল শাখার সিটি ব্যাংক বেস্ট অপশান। গতবার আমার ফ্রেন্ডের সাথে ইবিএল খুব ধানাই পানাই করছে এবং রেটও বেশি রাখছে। ব্র্যাক ব্যাংকও আমার সাথে অনেক ঝামেলা করছে (এই পেপার্স দেন, সেই পেপার্স দেন)। টাকা পাঠিয়ে আবার হাশফাঁস করার দরকার নাই যে হায় হায় কৈ গেল আমার টাকা। নরওয়েজিয়ানরা আপনার টাকা মারবে না। টাকা পাঠানোর কয়েক কার্যদিবসের মধ্যে তারা আপনাকে টাকা প্রাপ্তির কনফার্মেশন লেটার ইমেইল করে দিবে। এই টাকার উৎস কী, ট্যাক্স দেওয়া আছে কি না এতোকিছু দেখার সময় নরওয়ের নাই। আবেদন করার সময় যে অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন ঐ অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা পাঠাতে হবে এমনও কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। মোটকথা, টাকা গেলেই হলো। নরওয়ে পা রাখার পর কিছু ফর্মালিটি পালন করে, অল্প কিছু টাকা ব্যাংক চার্জ হিসেবে রেখে তারা আপনাকে বাকি টাকা এককালীন ফেরত দিবে। তখন আপনি চাইলে নিজের কাছেও রাখতে পারেন বা দেশেও পাঠিয়ে দিতে পারেন।
২. তারপর SSC, HSC এর সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট নিয়ে যাবেন নিজ নিজ বোর্ডে সত্যায়িত করার জন্য। চার কপি করে ফটোকপি করে নিবেন সব। ঢাকা বোর্ডে এই ১৬ কপির জন্য নিবে ৪০০ টাকা। অ্যাম্বাসি যদিও জমা নিবে ১ কপি করে। আসলে ঢাকা বোর্ডে ১৬ কপির জন্যও ৪০০ টাকা, ৪ কপির জন্যও ৪০০ টাকা। তাই বেশি করে রাখতে তো দোষ নাই। কোনো ঘুষ লাগবে না। ৭ দিন পর দিবে তবে ঘুষ দিলে হয়তো তাড়াতাড়ি করে দিবে। আমি ঘুষ ছাড়াই করেছিলাম। অন্য বোর্ডে কত টাকা লাগবে জানি না। মূলকপির সত্যায়িত করার দরকার নাই, চাইলে করে রাখতে পারেন।
৩. ব্যাচেলার এর ট্রান্সক্রিপ্ট আর সার্টিফিকেট
এর ফটোকপি আপনার ইউনিভার্সিটির এক্সাম কন্ট্রোলার থেকে সত্যায়িত করে নিবেন। মূল কপি করার দরকার নাই।
৪. তারপর এই সত্যায়িত অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে যাবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিনেরটা দিনেই করে দিবে। সকালে জমা নিবে ৩ টার পর ফেরত দিবে।
৫. তার পরের দিন সব নিয়ে যাবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তারাও ১ দিনেই করে দিবে। এবার থামেন আর কোনো সত্যায়িত লাগবে না, বহুত হইছে! 😜
৬. UDI এর ওয়েবসাইট (https://www.udi.no/en/want-to-apply/?c=bgd) থেকে ভিসা আবেদন ফর্ম, চেকলিস্ট এর ফর্ম ((https://www.udi.no/en/checklists-container/studies-au-pair/checklist-student/?c=bgd)
পূরণ করে প্রিন্ট করে সাইন দিবেন।
৭. পাসপোর্টের প্রথম থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত (ব্যবহার হোক আর না হোক) সাদাকালো ফটোকপি করে নিবেন।
৮. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার কোনো দরকার নাই, বার্থ সার্টিফিকেটেরও কোনো দরকার নাই। অযথা এগুলো জোগাড় করতে গিয়ে নিজের সময় আর অর্থের অপচয় করবেন না।
৯. অফার লেটারের সাথে লেটার অফ ভিসা পারপাস-এ লেখা থাকবে যে আপনার উনিভার্সিটি হাউজিং গেরেন্টেড, তাই বলে নাকে তেল দিয়ে না-ঘুমিয়ে সঠিক সময়ে হাউসিং এর জন্য আবেদন না-করলে কিন্তু হাউজিং পেতে দেরি হবে। আমার মতে অফার লেটার পাওয়ার পরই হাউসিং এর জন্য আবেদন করে ফেলা উচিত। হাউজিং পেলে আপনাকে ওরা ৫০০০ ক্রোনা ডিপোজিট করতে বলবে কিন্তু আপনি আবার ফিরতি ইমেইলে বলে দিবেন নতুন করে আর কোনো টাকা দিতে পারবো না 😏, আগে যে ১১১৬৫৭ ক্রোনা দিছি ঐখান থেকে কেটে নাও।
১০. সব কাগজ রেডি করে গুলশান ২-এ VFS এর অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুম দিবেন। আগে কোনো ভিসা ইন্টারভিউ ছিল না নরওয়ের স্টুডেন্ট ভিসার জন্য। তবে এই বছর থেকে ইন্টারভিউ প্রথা চালু হয়েছে।
১১. ভিসা অ্যাপ্রুভ হয়ে গেলে ওরা আপনাকে ইমেল করে জানাবে। আমার ভিসা হতে ১৮ দিন লেগেছিল, আরো কম বেশি লাগতে পারে।
১২. তারপর আপনার পাসপোর্ট নিয়ে ডেনমার্ক অ্যাম্বাসিতে জমা দিবেন। ভিসার সিল লাগাবে তাই (নরওয়ে এর অ্যাম্বাসি আমাদের দেশে থাকলেও নরওয়েজিয়ান ভিসা দেওয়ার কাজটা ডেনমার্ক অ্যাম্বাসি করে থাকে)।
১৩. অতঃপর ভিসা সমেত পাসপোর্ট হাতে পেয়ে একটা সেলফি তুলে ফেবুতে পোস্ট করবেন নরওয়ে হেয়ার এই কাম। 😎
লেখা ও কৃতজ্ঞতা- দিদারুল আলম আকন ভাই
* বর্তমানে সার্টিফিকেট সত্যায়িত করতে হয় না।