দক্ষিণ কোরিয়া কেন অনন্য

উচ্চশিক্ষা অর্জনে দক্ষিণ কোরিয়া কেন অনন্য

উচ্চশিক্ষা অর্জনে কোথায় পড়ালেখা করবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কেননা তার উপর ভিত্তি করেই আপনার পুরো ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। সারাবিশ্বের মধ্যে একটি দেশ বাছাই করা হয়তো খুব কষ্টসাধ্য মনে হতে পারে। কারণ, পড়ালেখার মান, জীবনযাত্রা, আবাসন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয় সব দেশে এক রকম হয় না। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের একাডেমিক রেজাল্ট এবং আর্থিক অবস্থাও মুখ্য বিষয় হিসেবে গণ্য।
শিক্ষার্থীদের কাছে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি কিংবা ইউরোপিয়ান দেশগুলো প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তবে উন্নতব্যবস্থাসম্পন্ন এমন অনেক দেশ থাকতে পারে, যা আপনি হয়তো বিবেচনাও করেননি। তাই এই ব্যাপারে সময় নিয়ে একটু ঘেঁটে দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে এশিয়ান দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়ালেখা করা আপনার জন্য বেশ বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠতে পারে। কেননা, দেশটিতে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি পাচ্ছেন আকর্ষণীয় কোরিয়ান সংস্কৃতির সান্নিধ্য, মনোরম আবহাওয়া বেষ্টিত চমৎকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও উন্নত জীবনব্যবস্থা। আনুষ্ঠানিকভাবে রিপাবলিক অব কোরিয়া নামকরণ করা হলেও দেশটি দক্ষিণ কোরিয়া হিসেবেই সবার নিকট পরিচিত।
আজকের পর্বে দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়ালেখার সুযোগ-সুবিধাগুলো তুলে ধরবো।

শিক্ষাব্যবস্থাঃ

এখানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি ও কোরিয়ান উভয় ভাষার কোর্স রয়েছে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি করার জন্য শিক্ষার্থীরা কোরিয়ায় যেতে পারেন। ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ সাধারণত তিন থেকে চার বছর, মাস্টার্স ডিগ্রির মেয়াদ এক থেকে দুই বছর এবং ডক্টরাল/ পিএইচডি ডিগ্রির মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর হয়ে থাকে।
কোরিয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফল ও স্প্রিং এই দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। সাউথ কোরিয়ায় ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ভর্তি বেশ প্রতিযোগিতামূলক। এসএসসি, এইচএসসি অথবা ও-লেভেল, এ-লেভেলে খুব ভালো ফলাফলের পাশাপাশি ‘সহশিক্ষামূলক’ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে সুবিধা পাওয়া যায়। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য এসবের বিকল্প নেই।

স্বল্প খরচঃ

দেশটির মুদ্রার মান বাংলাদেশি টাকার তুলনায় খুবই কম। কোরিয়ান ১০০ ওন, বাংলাদেশি মুদ্রায় মাত্র ৮ টাকার কাছাকাছি। তাই এদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্প খরচে পড়ালেখা করার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। তাছাড়া আবাসন, খাদ্য ও পরিবহন ব্যয়ও স্বল্প খরচে মিটিয়ে ফেলা যায়। দক্ষিণ কোরিয়ায় টিউশন ফি ও থাকা খাওয়ার খরচ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া বা কানাডার চেয়ে কম। তবে, এদেশের ডিগ্রির মান ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সিউলের মতো বড় শহরগুলোতে টিউশন ফি ও থাকা-খাওয়ার খরচ একটু বেশি, তবে অন্যান্য শহরগুলোতে খরচ কম।

প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ

দক্ষিণ কোরিয়া তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে কিছু প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যারা বিশ্বমানের শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। এদেশের তিনটি বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হলো কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সিওল ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইয়োনসেই বিশ্ববিদ্যালয়। মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি রয়েছে মেধাবি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা।

আন্তরিকতাঃ

কোরিয়ান নাগরিকেরা আচার-আচরণ এবং ব্যবহারের দিক থেকে অত্যন্ত বিনয়ী। বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের তারা বেশ আন্তরিকভাবেই স্বাগত জানায়। তারা প্রায়শই তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে অপরিচিতদের পরিচয় করিয়ে দিতে পছন্দ করে। তাই আপনি খুব সহজেই তাদের কাছ থেকে সেই দেশের আদ্যোপান্ত সম্পর্কে শিখে নিতে পারবেন।

ভাষা শিক্ষাঃ

এদেশে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কোর্সের পাশাপাশি কোরিয়ান ভাষার কোর্সেরও ব্যবস্থা করে থাকে। তাই যারা শিক্ষাঅর্জন শেষে দেশটিতে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা পাশাপাশি কোরিয়ান ভাষাও শিখে নিতে পারেন। কারণ, স্থানীয় ভাষা শিখতে পারলে, দ্রুতই সেখানে বসবাসের যোগ্য হয়ে যাবেন ও পড়ালেখা শেষে ভালো চাকরির সুযোগ পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।

খাদ্য বৈচিত্র্যঃ

আপনি যদি কম দামে মজাদার ও সুস্বাদু খাবার খেতে চান, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া আপনার জন্য একদম সঠিক জায়গা। খাদ্য বৈচিত্র্য এদেশের সংস্কৃতির অংশ। কোরিয়ার মানুষের খাবারের মধ্যে সাধারণত ভাত, মাছ, মাংস, স্যুপ, সবজি এবং কিছু বিশেষ ধরনের খাবার টোফু, সোজু, মাকজোলি ও বকবুনজা জু ইত্যাদি জনপ্রিয়। এছাড়াও এখানের স্ট্রিট ফুড খুবই জনপ্রিয়। এদেশে রাস্তার পাশে সারি সারি স্ট্রিট ফুডের দোকান রয়েছে, যেগুলো স্বল্পমূল্যে মানসম্মত খাবার সরবরাহ করে থাকে। বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এমনকি কিছু কিছু রেস্তোরাঁ ২৪ ঘণ্টা খাবার ডেলিভারি সেবা দিয়ে থাকে।

আবাসন ব্যবস্থাঃ

দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়াশোনার জন্য যেতে চাইলে আপনাকে আবাসন নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাতে হবে না। কারণ প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি স্বল্প খরচে এসব হোস্টেলে থাকতে পারবেন।

কাজের সুযোগঃ

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা চাইলেই সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা খণ্ডকালীন কাজ করতে পারেন। তাছাড়া, শিক্ষার্থীরা ছুটির সময় ফুলটাইম কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন।

টিউশন ফিঃ

সাধারণত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় টিউশন ফি কম হয়ে থাকে। যেহেতু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর নির্ভর করে টিউশন ফি পৃথক হতে পারে, তাই কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে ফি’র ব্যাপার নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উত্তম। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স ভেদে ১৫০০ মার্কিন ডলার থেকে ১৫,০০০ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপঃ

সব দেশের মধ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিনিময় এবং পারস্পরিক বন্ধুত্ব প্রচারের লক্ষ্যে কোরিয়াতে উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর সরকারিভাবে গ্লোবাল কোরিয়া স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে থাকে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি’সহ অন্যান্য সব খাতে আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন।
💬
BANGLAY AI