জার্মানিতে পড়তে চাইলে কিছু প্রাথমিক ধারণা
উচ্চশিক্ষা অর্জনে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা জার্মানি যায়। উন্নত শিক্ষার পাশাপাশি উন্নত জীবনের হাতছানিতে ইউরোপিয়ান এই দেশটি রয়েছে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার প্রথম সারিতে।
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষায় প্রায় ৪২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে ১০৬টি বিশ্ববিদ্যালয়, ২১৬টি অ্যাপ্লাইড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, মিউজিক ও ফাইন আর্ট বিষয়ক ৫২টি কলেজ এবং ১৬টি থিওলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ২২ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৩,২০,০০০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। গত ১৫ বছরে জার্মানিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ।
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন
জার্মানিতে মূলত তিন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রথমত, অ্যাপ্লায়েড বিশ্ববিদ্যালয় (Applied Science University)। যেখানে ছাত্রদের মূলত চাকরি ওরিয়েন্টেড বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। গবেষণামূলক কাজ এখানে হয় না বললেই চলে।
দ্বিতীয়ত, টেকনিক্যাল বা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (Technical University), যেখানে প্রকৌশলসহ বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলো পড়ানো হয়, সঙ্গে রয়েছে ব্যাপক গবেষণামূলক প্রকল্প।
তৃতীয় ভাগে আছে নরমাল বিশ্ববিদ্যালয়, যেগুলো মূলত ইউনি (UNI) হিসেবে পরিচিত। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্যসহ সব অনুষদই পড়ানো হয়। আকারে ইউনিগুলো বড় হয়ে থাকে।
অনেক ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি নিজ অর্থায়নে পিএইচডি করার সুযোগ থাকলেও জার্মানিসহ অনেক ইউরোপীয়ান দেশ এই নিয়মের ব্যতিক্রম। এখানে পিএইচডি পর্যায়ের সব ছাত্রই প্রায় চাকরির সমপরিমাণ বৃত্তি বা বেতন পেয়ে থাকেন। তবে এসব সুযোগ বিজ্ঞান বা প্রকৌশল বিষয়ের ছাত্রদের জন্যই বেশি দেওয়া হয়।
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে লুদভিক ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ, ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন, হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি, উলম ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাড হনেফ উল্লেখযোগ্য।
যেভাবে আবেদন করবেন
জার্মানিতে পড়ালেখার জন্য বিভিন্নভাবে যাওয়া যায়। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কেউ যেতে চাইলে তাকে জার্মান ভাষা কোর্সে ভর্তি হতে হবে। খুব অল্পসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ইংলিশ ভাষায় কোর্স চালু আছে। প্রথম চেষ্টা করতে পারেন ইংলিশ ভাষায় পড়ানো হয় এমন কোনো subject-এ ভর্তি হতে। তা না পেলে দু’ভাবে ব্যাচেলর কোর্সে ভর্তি হওয়া যেতে পারে।
প্রথমত, বাংলাদেশে জার্মান ভাষার কিছু প্রাথমিক জ্ঞান নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করুন। ভর্তি হতে পারলে জার্মানি পৌঁছে মূল কোর্স শুরুর আগে ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে জার্মান ভাষার বাকি কোর্স করে ফেলুন।
অন্যভাবেও আসা যায়, আপনি সরাসরি বাংলাদেশ থেকে জার্মানির যে কোনো ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রে apply করুন। ভর্তি হতে পারলে ভাষা শিক্ষার জন্য ভিসা পাবেন। এখানে এসে ভাষা শিক্ষা সমাপ্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার পছন্দের subject-এ ভর্তি হতে পারেন। তবে এই প্রক্রিয়া বেশ খরচ সাপেক্ষ।
মাস্টার্সে ভর্তির জন্য প্রথমে ডাড (daad.de)-এর ওয়েবসাইট থেকে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার পছন্দসই বিষয় আছে, তার তালিকা তৈরি করুন। আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী (যেমন রেজাল্ট, TOEFL/IELTS ইত্যাদি) পুরোপুরি খাপ না খেলেও নির্দ্বিধায় আবেদন করুন।
পিএইচডির জন্য সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। ভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে আপনার সাবজেক্ট সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টির ইনস্টিটিউটগুলোর তালিকা তৈরি করুন। ইনস্টিটিউট প্রফেসরকে সরাসরি মেইল করুন। জানতে চান পিএইচডির সুযোগ আছে কি না।
স্কলারশিপের সুযোগ
জার্মান বার্তা সংস্থা ডয়েচে ভেলের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, প্রতিবছর আড়াই লাখ বিদেশি শিক্ষার্থী এবং ২৩ হাজার পিএইচডি গবেষক জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হন৷ এই বিশাল সংখ্যার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ শতাংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকেন৷ ডিএএডি বা জার্মান ছাত্রবিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী জার্মানি পড়াশোনার সুযোগ পান৷
বর্তমানে ৪৫ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি৷ এই প্রতিষ্ঠানের বৃত্তিভোগীদের ৭০ শতাংশই আসেন বিদেশ থেকে৷ স্নাতক কোর্সের শিক্ষার্থীরা মাসে ৬৫০ ইউরো, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা ৭৫০ ইউরো আর পিএইচডি গবেষকেরা এক হাজার ইউরো পেয়ে থাকেন বৃত্তি হিসেবে৷ তবে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সুযোগ সীমিত।
STIPENDIATEN DER STUDENTSTIFUNG, DEUTSCHLAND STIPENDIUM নামের বৃত্তিসহ বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পাওয়ার সুযোগও রয়েছে। আডেনাওয়ার ফাউন্ডেশন, হাইনরিশ ব্যোল ফাউন্ডেশন, ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশন, বোরিংগার ইংগেলহাইম ফাউন্ডেশন প্রভৃতি ফাউন্ডেশন থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
যেভাবে তথ্য পাবেন
জার্মানির উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে তথ্য পাবেন কীভাবে? প্রথম কথা, আপনাকে ইন্টারনেটে লেগে থাকতে হবে। নিয়মিত ইন্টারনেটে বসা, সার্চ করা ও ব্যাপক যোগাযোগ অত্যাবশ্যক। ইন্টারনেটে আপনার নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তথ্য, ছাত্রবৃত্তিসহ অন্যান্য তথ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলোর মধ্যে জার্মান একাডেমিক একচেঞ্জ সার্ভিস DAAD ( https://www.daad.de/en/ ) গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিভিন্ন সাবজেক্টের তালিকা ও স্কলারশিপের তথ্য পাবেন। স্কলারশিপের জন্য জার্মান সায়েন্স ফাউন্ডেশন DFG ( http://dfg.de/en ) জার্মান শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয় BMBF( http://www.bmbf.de/ ) উল্লেখযোগ্য। এসব সংস্থার ওয়েবসাইটের সংশ্লিষ্ট ইংরেজি সংস্করণে আপনাকে অনেক খোঁজ করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদনের সব প্রক্রিয়া ও বৃত্তি সর্ম্পকে জানা যায়।
বাংলাদেশি স্টুডেন্ট অ্যান্ড অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ইন জার্মানির ওয়েবসাইট (bsaagweb.de) থেকেও শিক্ষার্থীরা জার্মানিতে বর্তমানে পড়ছেন এমন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরাসরি পরামর্শ নিতে পারেন। জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থা, দৈনন্দিন জীবনযাপন, পড়ালেখা-চাকরির সুবিধাসহ যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এ সাইট থেকে। (collection: rising bd)