আইইএলটিএস পরীক্ষায় লিসেনিংয়ে ভালো করার কৌশল!

লিসেনিং সেকশনে চারটা পার্ট থাকে। চার পার্টে ছয় ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন, Fill in the gap, MCQ, select correct answers, diagram matching, map fill up ইত্যাদি। আপনি যদি সবগুলো পার্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রাখেন, তাহলে প্রস্তুতি নেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। এখানে আবারও একটা রিমাইন্ডার দিতে চাই। প্রতিটা পার্টের রেকর্ডিং শোনার আগে অল্প যেটুকু সময় হাতে থাকে, সেটুকু সময়ের মধ্যে উক্ত পার্টের প্রশ্নগুলো যতটা সম্ভব মাথায় গেঁথে নিবেন। এতে করে কনভারসেশন শোনার সময় দিমাগ কি বাত্তি জ্বলে উঠবে।

 

প্রতিটা সেকশানে কয়েকটা করে গ্রুপ থাকে। যেমন, সেকশান ওয়ানের ১ এবং ২ নাম্বার প্রশ্ন নিয়ে একটা গ্রুপ থাকতে পারে, এবং ৩-১০ নাম্বার প্রশ্ন নিয়ে থাকতে পারে আরেকটা গ্রুপ। গ্রুপ আলাদা হয় কারণ প্রতিটা গ্রুপের প্রশ্নের ধরন আলাদা হয়। ধরা যাক, ১-২ প্রশ্নের যে গ্রুপ আছে, সেটার প্রশ্নের ধরন Multiple choice questions; আর ৩-১০ প্রশ্নের যে গ্রুপ আছে, সেটার প্রশ্নের ধরন Short-answer Question। আপনার অন্যতম কাজ হল, সব ধরনের প্রশ্ন সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা। এর একমাত্র উপায় বই থেকে মক টেস্ট সল্ভ করা। ক্যাম্ব্রিজের ৮-১৬ বইতে মোটামুটি সব ধরনের প্রশ্নই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

প্রতিটা আলাদা গ্রুপের জন্য আলাদা কথোপকথন শোনানো হয়। তবে কথোপকথন শুরুর আগে ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয়। বলা হয়, কত নাম্বার থেকে কত নাম্বার পর্যন্ত প্রশ্নের উত্তর এখন আপনাকে দিতে হবে, এবং কীভাবে উত্তর দিতে হবে। শূন্যস্থান পূরণ করবেন না কি তথ্য ম্যাচ করবেন ইত্যাদি। সেকশান ওয়ান শেষ হলে আপনাকে আধা মিনিট সময় দেওয়া হবে প্রশ্নের উত্তর চেক করার জন্য। এভাবে প্রতিটা সেকশন শেষে সময় দেওয়া হয়।

 

মনে রাখবেন, রেকর্ডিং শুনতে শুনতে আপনাকে সব উত্তর প্রশ্নপত্রে টুকে রাখতে হবে। যখন রেকর্ড শুনবেন, তখন কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখবেন। এসব বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত তথ্যগুলো সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে। যেমন:

 

  • কোনো শব্দের উপর জোর (accent) দেওয়া হচ্ছে কি না।
  • কোনো শব্দ দুইবার বলা হল কি না।
  • কোনো শব্দ বানান করে বলা হল কি না।
  • টেলিফোন নাম্বার, বাসার ঠিকানা, অফিসের ঠিকানাসহ যেকোনো ঠিকানা।
  • যেকোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং খোলার সময়।
  • সপ্তাহের কোন কোন দিন খোলা থাকে, কবে বন্ধ থাকে ইত্যাদি তথ্য।

 

সবগুলো পার্টের জন্য সবচেয়ে উপকারী কৌশল হল, সময়/তারিখ/ঠিকানা/সংখ্যা/ফোন নাম্বার শোনার সাথে সাথে প্রশ্নপত্রে টুকে নেওয়া। আপনি যখন রেকর্ড শুনছেন, তখন পুরো মনোযোগ শোনার দিকে থাকতে হবে। ফলে প্রশ্ন যদি আগে পড়েও থাকেন, তবুও শোনায় ব্যস্ত থাকার কারণে প্রশ্নগুলো মনে পড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তাই এসব তথ্য লিখে ফেলাই ভালো। পরে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যেগুলো লাগবে, সেগুলো টুকে নেওয়া তথ্য দেখে লিখে ফেলতে পারবেন। দুয়েকটা তথ্য বেশি লিখলে কোনও ক্ষতি নেই। কিন্তু না-লেখার ফলে যদি দুয়েকটা প্রশ্নের উত্তর মিস করে যান, সেটা ভুগাবে আগামী দুই বছর।

 

IELTS-এ একটা কথা আছে, “Last word counts”। অর্থাৎ আগে কে কী বললো, সেটা গোনার দরকার নেই। শেষে যে যা বলল, সেটাই সঠিক উত্তর। আরেকটু ভেঙ্গে বলি। অনেক সময় দেখবেন, একজন একটা বিষয়ে কোনো তথ্য দিলো, একটু পর সেই তথ্যটি “সঠিক নয়” ঘোষণা দিয়ে “সঠিক” তথ্যটি বলল। সুতরাং আপনার সঠিক উত্তর হবে শেষেরটা। এভাবে অনেক কারেকশনই দেওয়া হয় “আলাপচারিতা”-র মাঝে। তারমানে এই না, আপনি কারেকশনের জন্য বসে থাকবেন। আপনি যখন যেটা শুনছেন, সেটা লিখে ফেলবেন। কিন্তু আপনাকে কারেকশনের জন্যেও অস্ত্র হাতে তৈয়ার থাকতে হবে। কারেকশন দিলেই যেন আগের শব্দটা কেটে সঠিক শব্দটা বসিয়ে নিতে পারেন।

 

চার পার্ট শোনার পর যখন ১০ মিনিট সময় দেওয়া হবে উত্তরপত্রে উত্তর উঠানোর জন্য, তখন ভালোমতো চোখ রগড়ে দেখে নিবেন কী নির্দেশনা দেওয়া আছে।

 

> যদি প্রশ্নে উল্লেখ করা থাকে, Write NO MORE THAN THREE WORDS AND/OR A NUMBER for each answer, আপনাকে অবশ্যই তিনটি শব্দের মধ্যে অথবা একটি সংখ্যার মধ্যে উত্তর আটকে ফেলতে হবে। তিন শব্দের বেশি লিখলে বা একাধিক সংখ্যা লিখলে আপনার স্কোর হবে শুন্য! তবে এক বা দুই শব্দে উত্তর দিলে কোনো সমস্যা নেই। শুধু তিন শব্দের বেশি যাওয়া যাবে না।

 

* উত্তর CAPITAL LETTER দিয়ে লিখেন, আর Small letter দিয়ে লিখেন, সমস্যা নেই। শুধু খেয়াল রাখবেন, যখন উত্তর হিসেবে NOUN লিখবেন, তখন অবশ্যই CAPITAL LETTER দিয়ে নামটা শুরু করবেন। এক্ষেত্রে Small letter দিয়ে লিখলে উত্তর ভুল হিসেবে গণ্য হবে।

 

উত্তর Common Noun হলে সেটা Plural দিলেও চলে, Singular দিলেও চলে। যেমন, উত্তর যদি coast/fish/bird হয়, তবে coasts/fishes/birds লিখলেও সমস্যা নেই। কিন্তু Proper noun হলে যা বলেছে, সেটাই লিখতে হবে। যেমন, East coast বললে আপনি লিখতে পারবেন না East coasts।

 

* উত্তর হিসেবে অনেক সময় প্রতিশব্দও গ্রহণ করা হয়। যেমন, আলাপে বা বক্তৃতায় যদি garbage উচ্চারণ করা হয়, আর আপনি যদি উত্তরে waste বা rubbish লিখেন, তাহলেও সেটা সঠিক উত্তর হবে। অনেক সময় আমাদের মাথায় থাকে না, একজ্যাক্টলি কোন শব্দটা বলা হয়েছিল। তখন synonym ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেইফ সাইডে থাকার জন্য আলাপে যা বলেছে, সেটা দেওয়াই সবচেয়ে ভালো।

 

পার্ট ১-এ সাধারণত দুজন ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন থাকে। এই আলাপচারিতা হতে পারে কোনো ক্লাবের রিসিপশনিস্টের সাথে সম্ভাব্য মেম্বারের, জাদুঘরের কিউরেটরের সাথে সম্ভাব্য দর্শনার্থীর, বাস/ট্রেন/প্লেনের কোনো অফিসারের সাথে সম্ভাব্য যাত্রীর, বা এই ধরনের কিছু। এখানে সময়, তারিখ, ঠিকানা, যিনি ফোন করেছেন তার ব্যক্তিগত তথ্য, যে জিনিস সম্পর্কে জানার জন্য ফোন করা হয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকে। প্রশ্নের ধরন বেশীরভাগই হয় ফর্ম ফিলাপ লেয়াউটের।

 

লিসেনিং সেকশনের প্রথম পার্টটা হয় সবচেয়ে সোজা, ক্রমান্বয়ে পার্টগুলো কঠিন হতে থাকে। প্রশ্নের সংখ্যা সাধারণত সবগুলো পার্টেই ১০ টা করে মোট ৪০ টা থাকে।

 

পার্ট ২ এবং ৩-তে ম্যাপ/ডায়াগ্রাম ম্যাচিং/কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন থাকতে পারে। ম্যাপ বেশ সোজা। ম্যাপের ক্ষেত্রে কণ্ঠ যা বলছে, আপনি সে অনুযায়ী ম্যাপের মধ্যে পেন্সিল দিয়ে দাগাতে থাকবেন। না-দাগালে হঠাৎ করে বুঝা যায় না, ঠিক কোন পয়েন্ট নিয়ে বক্তা কথা বলছেন। পেন্সিল ব্যবহার করে যখন প্রশ্নের উত্তরে এসে পড়বেন, তখন সেটা বুঝা সহজ হয়। তবে সবার জন্য এই কৌশল নাও খাটতে পারে।

 

*ডায়াগ্রাম ম্যাচিং:

এক্ষেত্রে যদি কোনো প্রসেসের ডায়াগ্রাম আসে, তাহলে একই কৌশল অবলম্বন করা যায়। কারণ IELTS-এর একটা সুবিধা হল, এরা সিরিয়াল অনুযায়ী প্রশ্ন করে। হুট করে মাঝে বা শেষে ঢুকে পড়বে না। প্রসেসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলতে বলতে আসবে। ফলে পেন্সিল দিয়ে সিরিয়াল অনুযায়ী ডায়াগ্রামে দাগাতে দাগাতেই উত্তর পেয়ে যাওয়ার কথা।

 

কিন্তু শুধু প্রসেসই তো আসে না, আসে হরেক রকমের ডায়াগ্রাম। তাই চেষ্টা করবেন প্র্যাকটিস বুক থেকে সব ধরনের ডায়াগ্রাম সমাধান করে, সবগুলোর উপর দক্ষ হয়ে তারপর হলে যেতে।

 

*কনভারসেশান:

দুইয়ের অধিক ব্যক্তির মধ্যে (সাধারণত দেখা যায়, দুজন স্টুডেন্ট তাদের অ্যাডভাইজরের সাথে রিসার্চ টপিক নিয়ে আলোচনা করছে বা পড়াশোনার উন্নতি/অবনতি নিয়ে আলাপ করছে) কথা হলে উত্তর বের করা একটু কঠিন। তবে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে যেকোনো ব্যাপারেই দক্ষ হওয়া যায়, ভয় নেই। এক্ষেত্রে আমি বলবো, কনভারসেশন শোনার আগে যতটুকু সম্ভব প্রশ্নগুলো মাথায় ঢুকিয়ে ফেলতে। এতে করে উত্তর ট্র্যাক করা একটু সহজ হবে।

 

পার্ট ৪-এ সাধারণত একজন বক্তার বক্তৃতা থাকে। এই বক্তৃতা বেশিরভাগ সময়েই হয়ে থাকে সায়েন্টিফিক কোনো টপিকের উপর, অনেক সময় থাকে আর্টস বা অন্যান্য বিষয়। এই সেকশানটাই সবচেয়ে জটিল। বক্তা এতো বেশি তথ্য দেবেন যে, কোনটা রেখে কোনটা টুকবেন, দিশা পাবেন না। তবে হ্যালো! বলেছি না প্র্যাকটিস করতে করতে intuition জন্মায়? এখানে আপনার intuition অনেক কাজে দেবে। আর প্রশ্ন যেহেতু সিরিয়াল অনুযায়ী হয়, তাই আমি বক্তৃতার সিরিয়াল অনুযায়ী প্রশ্নের সিরিয়াল মিলিয়ে উত্তর বের করায় দক্ষ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি পারলে আপনি কেন পারবেন না, বলুন?

 

আরেকটা বিষয়!

 

MCQ প্রশ্নের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনটা অপশানের তিনটাই সঠিক আন্সার বলে মনে হয়। কারণ তিনটা সম্পর্কেই আপনি বলতে শুনেছেন। এক্ষেত্রে আপনারা নিজেদের সুবিধার জন্য ম্যাপ/ফ্লোচার্ট তৈরি করে নিতে পারেন। যে আলাপ বা বক্তৃতাটা শুনছেন, সেটা শুনতে শুনতে পেপারে একটা ম্যাপ/ফ্লোচার্ট এঁকে ফেলতে পারেন। বক্তা হয়তো একটা বিষয়ে কথা শুরু করে আরও অনেক ডালপালা গজিয়ে ফেললো। আপনি সবকিছুই শর্টকাটে লিখে ফেলবেন। এতে করে প্রশ্নের আন্সার খোঁজা সহজ হবে।

 

মনে রাখবেন, কোনো উত্তর মিস করলে মিস। ব্যস! ওটা নিয়ে আর ভাববেন না, প্লিজ। ওটা নিয়ে ভাবলে বাকিগুলোও আর দেখতে হবে না। যদি রেকর্ডিং শেষ হবার পর হাতে সময় থাকে, উত্তরটা নিয়ে ভাবতে বসুন। কিন্তু রেকর্ডিংয়ের মাঝে এই কাজ করবেন না। আবার ভাবতে গিয়ে প্রশ্নপত্রে উত্তর লেখার সময় যাতে ফুরিয়ে না যায়, প্রিয় পাঠক! সবদিক সামলে।

 

বি:দ্র: আমি “সাধারণত” শব্দটা ব্যবহার করেছি কারণ এই ধরনগুলো ধ্রুব সত্য নয়। এগুলো পরিবর্তিত হতে পারে।

 

ধন্যবাদ!